পুরাতন মনিটর কিনার আগে যে সব বিষয়গুলি চেক করতে হবে
একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড বা পুরানো মনিটর কেনা টাকা সাশ্রয়ের একটি দুর্দান্ত উপায়। বিশেষ করে যদি আপনি একটি কম বাজেটে পিসি সেট আপ করছেন বা আপনার বর্তমান সেটআপ আপগ্রেড করছেন।
যাইহোক, ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক্সের জিনিস কেনার ক্ষেত্রে কখনো লাভ হতে পারে আবার কখনো জিনিসটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে ক্ষতি হতে পারে তাই কেনাকাটা করার আগে কী দেখতে হবে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি আপনার টাকা জন্য সর্বোত্তম ভালো জিনিসপত্র পান তা নিশ্চিত করতে একটি পুরানো মনিটর কেনার সময় যে বিষয়গুলি জানা অত্যান্তু গুরুত্বপূর্ণ নিচে যেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. স্ক্রিনের অবস্থা: বাইরে সবকিছু ভালো আছে কিনা নিশ্চিত করুন
একটি পুরানো মনিটর কেনার সময় চেক করার প্রথম এবং সবচেয়ে সুস্পষ্ট জিনিস হল স্ক্রিনের অবস্থা। যেহেতু মনিটরগুলিতে অনেক খুঁটিনাটি জিনিসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনও স্ক্র্যাচ, ডেড পিক্সেল বা ফাটল আপনার ব্যাবহারের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
যে জিনিসগুলি চেক করবেন:
- স্ক্রীন স্ক্র্যাচ এবং ফাটল: স্ক্রিনের ক্ষতি চেক করার জন্য স্ক্রীনটি খুব ভালোভাবে পরিদর্শন করুন। ছোট স্ক্র্যাচও প্রথমে তেমন কিছু মনে না হলেও। কিন্তু সময়ের সাথে বিরক্তিকর লাগতে শুরু করে।
- ডেড পিক্সেল: একটি ডেড পিক্সেল হল স্ক্রিনের একটি ছোট বিন্দু যা রঙ পরিবর্তন করে না। এগুলি অনেক সময় বিভ্রান্তিকর হয়, বিশেষ করে গ্রাফিক্সের কাজ করার সময়।অনলাইনে এমন অনেক ডেড পিক্সেল টেষ্টার আছে। বিক্রেতাকে অনলাইন টুলগুলি ব্যবহার করে একটি "ডেড পিক্সেল টেস্ট" চালাতে বলুন যা কোনও ডেড বা আটকে থাকা পিক্সেল ধরা পড়বে।
- ব্যাকলাইট ব্লিডিং: এলসিডি মনিটরে, স্ক্রিনের চারপাশে আলো ব্লিডিং হতে পারে, বিশেষ করে অন্ধকার দৃশ্যে। কোনো অত্যধিক ব্যাকলাইট ব্লিডিং দেখতে অন্ধকার পরিবেশে মনিটরটি পরীক্ষা করুন।
প্রো টিপ: কোনও লুকানো স্ক্রিনের সমস্যা নেই তা নিশ্চিত করতে সর্বদা বিভিন্ন রকমের আলোর পরিস্থিতিতে মনিটরটি পরীক্ষা করুন।
২. মনিটরের রেজোলিউশন এবং আকার
একটি পুরানো মনিটর কেনার সময়, এটির রেজোলিউশন এবং স্ক্রীনের আকার জানা আপনার প্রয়োজনের সাথে মিলানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি রেজোলেউশন হতে আপনার মনিটরের ডিসপ্লে তত শার্ফ হবে। আকার বড় হলে আপনার যেকোনো কাজ করতে সুবিধা হবে।
কাজ ভেদে রেজোলিউশন:
- 1080p (Full HD): ব্রাউজিং, অফিসের কাজ এবং ভিডিও দেখার মতো বেশিরভাগ কাজের জন্য উপযুক্ত।
- 1440p (কোয়াড এইচডি): ফটো এবং ভিডিও ইডিটিং এর মতো পেশাদার কাজের জন্য আরও ভাল।
- 4K (আল্ট্রা এইচডি): হাই-এন্ড গেমিং বা বিভিন্ন কিছু তৈরির জন্য আদর্শ, কিন্তু 4K রেজোলিউশন সহ পুরানো মনিটরগুলি খুঁজে পাওয়া কঠিন এবং অনেক দামি।
কাজ ভেদে আকার:
- 19-24 ইঞ্চি: বেসিক ব্যবহার এবং কমপ্যাক্ট স্থানগুলির জন্য পারফেক্ট।
- 27-32 ইঞ্চি: গেমিং, পেশাদার কাজ বা মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য দুর্দান্ত।
রেজোলিউশন এবং স্ক্রিনের আকার আপনার কাজের প্রয়োজনীয়তা এবং স্থান মাপসই আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
3. Ports and Connectivity
একটি পুরানো মনিটরে সর্বশেষ Ports and Connectivity অপশনগুলি নাও থাকতে পারে, তাই এটি আপনি যে ডিভাইসে সংযোগ করার পরিকল্পনা করছেন ডিভাইসগুলিকে সমর্থন করে কিনা তা পরীক্ষা করে৷ তাই আপনার অন্য ডিভাইসের সাথে কানেক্ট করার মনিটরের Ports and Connectivity আপনার প্রয়োজন অনুসারে আছে কিনা তা চেক করুন।
বিভিন্ন ধরণের পোর্ট:
- VGA (ভিডিও গ্রাফিক্স অ্যারে): একটি পুরানো সংযোগের ধরন, কিন্তু এখনও অনেক ব্যবহারকারীর জন্য কার্যকরী।
- DVI (ডিজিটাল ভিজ্যুয়াল ইন্টারফেস): VGA এর চেয়ে ভালো মানের অফার করে এবং উচ্চতর রেজোলিউশন সমর্থন করে।
- HDMI (হাই-ডেফিনিশন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারফেস): আধুনিক ডিভাইসে সবচেয়ে সাধারণ পোর্ট, হাই-ডেফিনিশন ভিডিও এবং অডিও প্রেরণ করতে পারে।
- ডিসপ্লেপোর্ট: উচ্চ-পারফরম্যান্স মনিটরের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে গেমিং বা পেশাদার এডিটিংয়ের জন্য।
- ইউএসবি-সি: কিছু নতুন মনিটর ভিডিও আউটপুট এবং পাওয়ার ডেলিভারির জন্য ইউএসবি-সি পোর্টের সাথে আসে, তবে পুরানো মডেলগুলিতে থাকার সম্ভাবনা কম।
আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা গেমিং সিস্টেমের জন্য মনিটরে প্রয়োজন অনুযায়ী পোর্ট রয়েছে তা নিশ্চিত করুন।
4. রিফ্রেশ রেট এবং রিয়েকশস টাইম
আপনি যদি গেমিং বা ভিডিও ইডিটিং-এর জন্য একটি ব্যবহৃত মনিটর কিনতে চান, তাহলে আপনাকে রিফ্রেশ রেট এবং রবয়েকশন টাইম বিবেচনা করতে হবে।
এই স্পেসিফিকেশনগুলি সরাসরি ডিসপ্লের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে দ্রুত গতির কোনো কাজের জন্য।
রিফ্রেশ রেট:
- 60Hz: বেশিরভাগ পুরানো মনিটরের জন্য স্ট্যান্ডার্ড, দৈনন্দিন কাজের জন্য ঠিকঠাক।
- 75Hz-144Hz: গেমিং এবং স্মুথ ভিডিও প্লেব্যাকের জন্য আরও ভাল।
রিয়েকশন টাইম:
- 1ms-5ms: মোশন ব্লার কমাতে গেমিংয়ের জন্য খুব ভালো।
- 5ms-10ms: অফিসের কাজ এবং সাধারণ ব্যবহারের জন্য গ্রহণযোগ্য।
আপনি গেমিং বা গ্রাফিকের কাজের জন্য মনিটর ব্যবহার না করলে, একটি কম রিফ্রেশ রেট এবং উচ্চ রিয়েকশন টাইম ঠিক হবে।
৫. ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন পলিসি
একটি ব্যবহৃত মনিটর কেনা ঝুঁকিপূর্ণ অনেকটাই ঝঁকিপূর্ণ কাজ। কারণ আপনি হয়তো জানেন না যে এটি আগের মালিকের দ্বারা কতটা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছিল। ঝুঁকি কমাতে, যেকোনো ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে কিনা তা জিঙ্গাসা করুন।
- ওয়ারেন্টি: কিছু বিক্রেতা একটি সীমিত ওয়ারেন্টি অফার করে, এমনকি ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক্সের জন্যও। যদি পাওয়া যায় তবে নিশ্চিত করুন যে ওয়ারেন্টি কমপক্ষে 30 দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থাকবে।
- রিটার্ন পলিসি: যদি মনিটর প্রত্যাশিতভাবে কাজ না করে বা লুকানো সমস্যা থাকে, তাহলে একটি রিটার্ন পলিসি আপনার টাকা নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। এমন বিক্রেতাদের সন্ধান করুন যারা কমপক্ষে 7 থেকে 14 দিনের রিটার্ন উইন্ডো অফার করে।
প্রো টিপ: আপনি যদি একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কিনছেন, কেনার আগে সর্বদা বিক্রেতার কেমন তা যাচাই করুন এবং রেটিং কত তা পরীক্ষা করুন৷
৬. ব্রাইটনেস এবং রঙের সঠিকতা
বিশেষ করে গ্রাফিক ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর বা যে কেউ রঙ, উজ্জ্বলতা এবং রঙের নির্ভুলতা নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য মনিটরের কর্মক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্রাইটনেস এবং রঙের সঠিকতা।
কি দেখতে হবে:
- ব্রাইটনেসের মাত্রা: সাধারণ ব্যবহারের জন্য কমপক্ষে 250 নিটের ব্রাইটনেস আব্যশকীয়। না হলে উজ্জ্বল আলোকিত রুমে মনিটরকে দেখতে অসুবিধা হবে।
- রঙের নির্ভুলতা: সঠিকভাবে রঙ প্রদর্শন করার জন্য মনিটরের ক্ষমতা পরীক্ষা করতে অনলাইন বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করুন।
আইপিএস বনাম টিএন প্যানেল:
- IPS (ইন-প্লেন স্যুইচিং): আরও ভাল রঙের নির্ভুলতা এবং বৃহত্তর দেখার কোণ অফার করে তবে রিয়েকশন টাইম আরও বেশি এবং ধীর হতে পারে।
- TN (Twisted Nematic): সস্তা এবং দ্রুত।
৭. বিদ্যুৎ খরচ এবং তাপ উৎপাদন
পুরানো মনিটরগুলি আধুনিক মডেলের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে সেগুলি কখনও কখনও অতিরিক্ত গরম হতে পারে। উচ্চ বিদ্যুৎ বিল বা কর্মক্ষমতা সমস্যা এড়াতে এই কারণগুলির জন্য পরীক্ষা করুন।
বিদ্যুৎ বিল খরচ:
- মনিটর কত ওয়াটের তা দেখুন। কম ওয়াটের মনিটর আপনার টাকা সাশ্রয় করবে।
তাপ উৎপাদন:
- মনিটরটি কিছুক্ষণ চালু থাকার পরে তার পিছনে স্পর্শ করে দেখুন। অত্যধিক তাপ অভ্যন্তরীণ সমস্যা ইঙ্গিত দেয়, যা পরে গিয়ে কোনো বড় সমস্যার কারণ হবে।
৮. মূল্য তুলনা
একটি পুরানো মনিটর কেনার সময়, মূল্য তার অবস্থা, বয়স এবং স্পেসিফিকেশন জানা উচিত। নতুন মনিটরের সাথে মূল্য তুলনা করে যদি আপনি ২-৩ গুণ কম দামে পান তাহলে সেটিই কিনুন অন্যথায় একটি নতুন মনিটর কিনুন।
মূল্য তুলনা কিভাবে করবেন:
- অনুরূপ মডেলগুলির বর্তমান মান দেখতে কোনো অনলাইন সফ বা কোনো মার্কেটে সরাসরি গিয়ে পরীক্ষা করুন৷
- নতুন বাজেট মনিটরের সাথে ব্যবহৃত মনিটরের খরচ তুলনা করুন। কখনও কখনও, একটি নতুন মনিটর এবং একটি পুরাতন মনিটরের দামের মধ্যে তেমন বেশি পার্থক্য নাও হতে পারে।
দাম নিয়ে আলোচনা করা:
- দাম কমাতে মনিটরে যে ক্রুটিগুরি আছে সেগুলো বিক্রেতা দেখান।
- যদি বিক্রেতা ত্রুটিগুলির জন্য একটি ন্যায্য ডিসকাউন্ট দেয় তাহলে নিবেন, আর যদি না দেয় তাহলে মনিটর না নেওয়ায় ভালো হবে।
৯. কেনার আগে মনিটর পরীক্ষা করুন
যখনই সম্ভব, টাকা দেওয়ার আগে আপনার মনিটর পরীক্ষা করা উচিত। এটি আপনাকে যে কোনও লুকানো সমস্যাগুলি ধরতে সাহায্য করবে। যেটি হয়তো আপনি আগে দেখেননি।
কি পরীক্ষা করতে হবে:
- ডিসপ্লে কোয়ালিটি: স্ক্রিন ফ্লিকার বা ল্যাগ ছাড়াই স্মুথ ভাবে চলে কিনা তা দেখতে একটি ভিডিও বা গেম চালান।
- উজ্জ্বলতা এবং সেটিংস: সেটিংগুলি সঠিকভাবে কাজ করে কিনা তা দেখতে সেটিংস পরিবর্তন করুন।
- পোর্ট এবং সংযোগ: বিভিন্ন পোর্ট পরীক্ষা করতে আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে প্লাগ ইন করুন এবং নিশ্চিত করুন যে সেগুলি কাজ করছে।
প্রো টিপ: পরে অতিরিক্ত খরচ এড়াতে পরীক্ষার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে পাওয়ার তার এবং প্রয়োজনীয় অ্যাডাপ্টার সরবরাহ করে নিন।
১০. ব্র্যান্ড
কিছু মনিটরের ব্র্যান্ডের ভাল দীর্ঘায়ু এবং বিল্ড মানের জন্য একটি খ্যাতি রয়েছে। একটি পুরানো মনিটর কেনার সময়, তাদের স্থায়িত্বের জন্য পরিচিত নামী ব্র্যান্ডের কেনার চেষ্টা করুন।
কিছু ভালো মনিটরের ব্র্যান্ড:
- Dell: অফিসের কাজের জন্য উপযুক্ত টেকসই, সু-নির্মিত মনিটরের জন্য পরিচিত।
- LG: ভালো রঙের নির্ভুলতার সাথে বড় মনিটর অফার করে।
- Samsung: উচ্চ-মানের ভিডিও প্রদর্শন এবং টেকসই।
- HP: ব্যবসা এবং অফিস ব্যবহারের উপর ফোকাস সহ এটি নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের।
অজানা ব্র্যান্ডগুলি এড়িয়ে চলুন: সস্তা বা অজানা ব্র্যান্ডগুলি কম দামে মনিটর দিদে পারে, তবে সেগুলি প্রায়শই কম নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
উপসংহার
একটি পুরানো মনিটর কেনা টাকা সঞ্চয় করা একটি ভালো পদ্ধতি। তবে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময় আপনাকে সতর্ক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হবে। মনিটরের অবস্থা, স্পেসিফিকেশন এবং কানেক্টিভিটি পরীক্ষা করে যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি মনিটরটি কিনে লাভবান হতে পারবেন।
আপনি স্থানীয় বিক্রেতা বা অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেখানে থেকে কিনছেন না কেন, কেনার আগে মনিটর পরীক্ষা করুন এবং সব সময় মানি ব্যাক গ্যারান্টির নীতি রাখুন।
এই আর্টিকলেটি আপনাকে সেকেন্ড-হ্যান্ড মনিটর বাজারের ভালো জ্ঞান দিবে এবং এটি মাধ্যমে আপনি পুরাতন মনিটর কিনার সময় সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে পারবেন আশা করি।